লিখনী ডেক্স:
ডা মো আব্দুল্লাহ আল মামুন চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ: চারিদিকে প্রতিটি বাড়িতে ই এখন জ্বর। অধিকাংশ সময় ভাইরাস জ্বর হবার কারনে বাড়ির প্রতিটা মানুষ ই আক্রান্ত হচ্ছে। সবচেয়ে দুঃশ্চিন্তা হয় যখন বাড়ির আদরের ছোট শিশুটা জ্বরে আক্রান্ত হয়।
শিশুর জ্বর নিয়ে সচেতনতা মূলক তথ্য যা প্রতিটি শিশুর বাবা-বাবা-মায়ের জানা ভীষণ প্রয়োজন:
১. যে কোনো ভাইরাস জ্বর ৩ থেকে ৫ দিন টানা ১০২°/১০৩°F হতে পারে এবং কমলেও ১০১°F এর নিচে জ্বর নাও নামতে পারে। কাজেই জ্বর শুরু হওয়ার পরের বেলাতেই বা পরের দিনই জ্বর কমছে না কেন, কমছে না কেন বলে অস্থির হওয়া যাবে না।
২. একদিনে জ্বর কমিয়ে দেয়ার কোনো মেডিসিন বা ম্যাজিক ডাক্তারদের বইয়ে লেখা নাই। ভাইরাস জ্বরে এন্টিবায়োটিক কোনো কাজে লাগে না যদি না কোন ইনফেকশনের সোর্স পাওয়া যায়। ইনফেকশনের সোর্স প্রকাশ পেতে অনেক সময় ৩-৫ দিন সময় লেগে যায়।
৩. জ্বর হলে বাচ্চা খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিবে। বড়রাও দেয়। এই সাময়িক অরুচির প্রাথমিক কোনো চিকিৎসা নাই। সবার মতো আপনাকেও বুঝিয়ে শুনিয়ে অল্প অল্প করে পানি তরল/জাউ/স্যুপ/শরবত বা বাচ্চা যেটা খেতে চায়, তাই খাওয়াবেন। তবে খেয়াল রাখবেন বাচ্চাকে এমন কিছু দিবেন না যা বাচ্চার বমি/পাতলা পায়খানা ঘটায়।
খেয়াল রাখবেন বাচ্চার পেশাব ২৪ ঘন্টায় যেন অন্তত ৪/৫ বার হয়। মুখে একদমই খেতে না পারলে, পেশাব কমে গেলে, বমি বন্ধ না হলে বা খিঁচুনি হলে দেরি না করে নিয়ে বাচ্চাকে হাসপাতালে যাবেন।
৪. হালকা জ্বরে (১০০°F থেকে ১০২°F) প্রথমে সারা শরীর ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে মুছে দিবেন, সাথে মুখে ঔষধ খাওয়াবেন। একবার ঔষধ খাওয়ানোর পর পুনরায় মুখে সিরাপ খাওয়াতে অন্তত ৪/৬ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে। আর পায়ুপথে সাপোসিটারী দিতে হলে অন্তত ৪ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে।
৫. বেশী জ্বরে (১০২°F এর উপরে গেলে) তাড়াতাড়ি জ্বর কমানোর প্রয়োজন হলে পায়ুপথে সাপোসিটার ব্যবহার করতে পারেন (যদিও এটা বাচ্চাদের জন্য অস্বস্তিকর), এতে জ্বর সাময়িকভাবে হয়তো ১০২°F এর নিচে নামতে পারে তবে জ্বর পুরোপুরি নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা কমই ১ম তিনদিনে। একটা সাপোসিটারী দেয়ার ৮ ঘন্টার মধ্যে আরেকটা সাপোসিটারী দিতে পারবেন না। তবে ৪/৬ ঘন্টা পর সিরাপ দিতে পারবেন।
৬. জ্বরের ঔষধ ডাবল ডোজে বা ঘন ঘন খাওয়ালে, এন্টিবায়োটিক দিলেই জ্বর ভালো হয়ে যাবে এমন নয়। ভাইরাসের পরিমানের উপর, কতদিন এরা এক্টিভ থাকে তার উপর জ্বরের স্থায়ীত্ব নির্ভর করে।
৭. জ্বরের ঔষধ খাওয়ানোর চেয়ে বাচ্চার যত্ন নিন, ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে ভিজা গামছা বা সুতি কাপড় দিয়ে গা মুছে দিন, গরম ও নরম খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করুন, সবচেয়ে বড় কথা বাচ্চাকে বিশ্রাম নিতে দিন। ভালো ঘুমাতে দিন, ঘুমের মধ্যে জ্বর থাকলেও তাকে ঘুম ভাঙিয়ে জ্বরের ঔষধ খাওয়ানোর দরকার নাই।
৮. ক্লিনিক্যাল থার্মোমিটার দিয়ে শিশুর বগলে ৩ মিনিট সময় ধরে মেপে জ্বর ১০০°F বা তার বেশী পেলেই জ্বরের ঔষধ খাওয়াবেন। গায়ে হাত দিয়ে গরম লাগা/জ্বর ৯৮°F/৯৯°F/জ্বরের আগে শীত শীতভাব/শরীরে অস্থির লাগছে দেখে জ্বরের ঔষধ খাওয়াবেন না।
৯. বাচ্চাদের এসিডিটি কম হয়, তাই একদম সম্ভব না হলে, খালিপেটে জ্বরের ঔষধ দিতে পারবেন।
১০. জ্বর হলে বাচ্চার এক আধটু বমি হতে পারে, কিছু জ্বরের ঔষধেও বাচ্চাদের বমি হয়। এসব ক্ষেত্রে বমির ঔষধ লাগে না। প্রয়োজনে জ্বরের ঔষধ পাল্টান। ঔষধ খাওয়ার ১০/১৫ মিনিটের মধ্যে বমি করলে ১৫/২০ মিনিট পর আবার পরিমাণ মতো জ্বরের ঔষধ খাওয়াতে হবে।
এখনও ডেঙ্গু জ্বর পাশাপাশি COVID-19 বা করোনা রোগীও পাওয়া যাচ্ছে । কাজেই এসব সন্দেহ হলেই শিশু বিশেষজ্ঞ দেখিয়ে রক্ত/পেশাব ইত্যাদি পরীক্ষা করে নিবেন।
আপনার শিশুকে সাবধানে রাখুন ও সবাই সুস্থ থাকুন।