মাহাবুল ইসলাম পরাগ টঙ্গী শিল্পাঞ্চল (গাজীপুর) প্রতিনিধি
১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
তাবলিগের জুবায়েরপন্থিদের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ
আগামী ২০ ডিসেম্বর থেকে টঙ্গীর ময়দানে ৫ দিনের জোড় ইজতেমা করার বিষয়ে এখনো অনড় মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা। তারা সকল বাধাকে অতিক্রম করে আবারও যথাসময় জোড় করার ঘোষণা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার তাবলিগের মাওলানা জুবায়েরপন্থিদর আবারও খোলা চিঠি দিয়ে এই ঘোষণা দেন তাবলিগ জামাত সাদপন্থিদের শীর্ষ মুরুব্বি সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘প্রিয় মাওলানা জুবায়ের সাহেব ও সাথীবৃন্দ! আপনি আমাদের আগের খোলা চিঠিতে দেয়া ঐক্য বা সমঝোতামূলক সহাবস্থানের আহ্বানকে কোনোরূপ সম্মান প্রদর্শন তো করেনইনি, উত্তরও দেননি! দেশ ও জাতির স্বার্থে আপনাকে আবারও খোলা চিঠি দিচ্ছি। আগামী ২০ ডিসেম্বর থেকে টঙ্গীর ময়দানে আমাদের পাঁচ দিনের জোড় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই জোড়কে কেন্দ্র করে আপনি যে সহিংসতামূলক বক্তব্য দিচ্ছেন এবং আপনার লোকদের ময়দানে জমা করে আমাদের জোড়কে ব্যাহত ও প্রতিহত করার অন্যায় পরিকল্পনা করছেন- তা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং ঘৃণ্য কাজ হিসেবে দেশ ও জাতির কাছে প্রমাণিত হচ্ছে!
সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম বলেন, আপনারা ময়দানে জোড় করেছেন- আমরা খোলা চিঠিতে আপনাদের জন্য দোয়া করেছি, আপনাদের সাফল্য কামনা করেছি। পাশাপাশি এও আহ্বান জানিয়েছি যে, আমাদের জোড়ের সময়ে আপনারা ময়দান খালি করে দেবেন। কিন্তু জানি না, কোন অজানা কারণে আপনি বারবার সহিংসতার পথে হাঁটছেন! দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আপনার তো এতোটুকু বোঝা উচিৎ যে, আমাদের পারস্পরিক যেকোনো সাংঘর্ষিক অবস্থাকে কেন্দ্র করে ‘তৃতীয় পক্ষ’ সুযোগ নিয়ে আবারও দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিতে পারে!
চিঠিতে আরও বলা হয়, মাওলানা জুবায়ের সাহেব! বিনয়ের সঙ্গে আপনাকে বলছি- উলামায়েকেরাম এবং মাদ্রাসার ছাত্রদের দিয়ে আমাদেরকে প্রতিহত করার যে দূর্বল পথে আপনি হেঁটেছেন- তা আপনাকে প্রতিষ্ঠিত তো করেইনি বরং দু’দিন আগে আপনি নিজেই স্বীকার করেছেন যে, আপনারা ‘অস্তিত্ব সংকটে ভুগছেন’। অন্যদিকে আল্লাহপাকের শোকর আদায় করি- আমরা নিজামুদ্দীনের অনুসারীরা এতো বাধা, এতো বিরোধিতার পরেও কখনো অস্তিত্ব সংকটে পড়িনি বা পড়ার বা ভোগার চিন্তাও করিনি। আমাদের শক্তি- আল্লাহপাকের প্রতি আমাদের অগাধ আস্থা, আমাদের ঐক্য এবং মার্কাজ নিজামুদ্দীনের প্রতি আমাদের ইতায়াত। দাওয়াতী মেহনতের বিশ্ব মার্কাজ নিজামুদ্দীন এবং বিশ্ব তাবলিগের আমির হজরত মাওলানা সা'দ সাহেব (দা. বা.) থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণেই আজ আপনারা অস্তিত্ব সংকটে পড়েছেন বলে আমরা মনে করি...!
সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম সতর্ক করে মাওলানা জুবায়েরকে বলেন, আপনাকে আহ্বান করছি: দয়া করে উলামা ও কোমলমতী ছাত্রদের অন্যায়ভাবে ব্যবহার করার এহেন পদক্ষেপ দ্বিতীয়বার নেবেন না বা নেবার চেষ্টাও করবেন না! আমরা পরিষ্কার ভাষায় জানাচ্ছি: আগামী ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে যে জোড় শুরু হতে যাচ্ছে- সেখানে কোনো পক্ষের কোনো একজন সাথীও যদি আপনার অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তার দায়ভার সম্পূর্ণভাবে আপনাকে ও আপনার পরামর্শদাতাদেরকে বহন করতে হবে!
এ বিষয়ে সাদপন্থি আলেম, জামিয়া কাশিফুল উলুম ঢাকার মুহতামিম সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ বলেন, আমরা আশা করছি মাওলানা জুবায়ের সাহেব তাবলিগের ইস্যুতে রাজনৈতিক আলেম ও মাদ্রাসার সাধারণ ছাত্রদের ব্যাবহার করে জাতির সামনে নিজেকে আর ছোট ও লজ্জিত করবেন না। এই উগ্র ফ্যাসিবাদী আচরণ ইসলাম, মানবাধিকার ও বাংলাদেশের সংবিধান সমর্থন করে না। তারা দারুল উলুম দেওবন্দ ও বিশ্বের শীর্ষ উলামায়ে কেরামের মতামতকে উপেক্ষা করে, সকল রাষ্ট্রীয় সমঝোতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, সকল মনাবিকতাকে অবজ্ঞা করে ইসলামের শ্বাসত সকল সৌন্দর্য ও ভালোবাসাকে ধুলায় মুশিয়ে দিচ্ছেন। আমরা দেশ, জাতি ও ইসলামের স্বার্থে তাদেরকে এই উগ্র ফ্যাসিবাদী পথ থেকে ফিরে আসার জন্য তাদের প্রতি সবিনয় আহবান করছি। আমরা কোন অস্থিতিশীল ও অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি চাই না।
তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের (সাদপন্থি) মিডিয়া সমন্বয়ক মো. সায়েম বলেন, আগামী ২০-২৪ ডিসেম্বর আমাদের পুরানা সাথীদের জোড় টঙ্গীর ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ। এতে কয়েক লাখ সাথী উপস্থিত হবেন। আমরা শেষবারের মতো বিনীত আহ্বান করছি, আমাদের জোড়ের নির্ধারিত তারিখের আগেই দয়া করে আপনারা টঙ্গী ময়দান খালি করে দেবেন। তারা ময়দানে জোড় করেছেন আমরা কোন প্রতিবাদ করিনি, তারা কেন মাদরাসার ছাত্র ও হেফাজত নিয়ে আমাদের জোড়ে বাধা দিচ্ছেন। আমরা আশা করি প্রসাশন ও সেনাবাহিনী তাদের ময়দান থেকে সরিয়ে দেবে।