উজ্জ্বল কুমার সরকারঃ
নওগাঁর পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম বেড়েই চলছে। সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি ও খুচরা বাজারে মোটা ও চিকন চাল কেজিতে ৩ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। এমন পরিস্থিতি জেলার ধান-চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন,প্রাকৃতিক দুর্যোগের
কারণে এ বছর বোরো মৌসুমে জেলার ১১ উপজেলায় উৎপাদন ঘাটতি হয়েছে। এর প্রভাবে মৌসুমের শুরু থেকেই হাটবাজারে ধানের আমদানি কমতে থাকে, এতে পাইকারি ও খুচরা বাজারে দফায় দফায় বাড়ছিল ধান ও চালের দাম তাই সংকট মোকাবেলা ও চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে ব্যবসায়ীরা শুল্কমুক্ত অবাধ আমদানির সুযোগ চেয়েছিলেন। সেই সুযোগ অবশ্য দেয়া হয়নি।
পরবর্তী সময়ে ঘাটতির সঠিক পরিমাণ নিরূপণ করে অনুমোদন মিললেও ততদিনে বেশ দেরি হয়ে যায়। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি রফতানিকারক দেশ ভারতের বাজারেই চালের দাম বেড়ে যায়। লোকসানের আশঙ্কায় প্রতিবেশী দেশ থেকে চাল আমদানি করতে নিরুৎসাহিত হন মিল মালিকরা এরই মধ্যে দেশে ডিজেলের মূল্য বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এতে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সপ্তাহের ব্যবধানে জেলার পাইকারি ও খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে ৩-৬ টাকা। বর্তমানে খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি চালের দাম ৫-৬ টাকা বেড়ে জিরাশাইল চাল ৬৫-৭০ টাকা, কাটারি ৭০-৭৫, ব্রি-ঊনত্রিশ ৫৬-৫৮, ব্রি-আটাশ ৫৬-৫৮ এবং স্বর্ণা-পাঁচ ৫৪-৫৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে মোটা চালের সরবরাহ একেবারে নেই বললেই চলে। এতে বাধ্য হয়ে নিম্নবিত্ত দিনমজুর শ্রেণীর মানুষকে চিকন চালের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। দফায় দফায় দাম বাড়ায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদেরকেই।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে- চলতি বোরে মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৯২ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যা থেকে ৯ লাখ ৭ হাজার ৫২৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হবে। নওগাঁ শহরের পৌর খুচরা চাল বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে বর্তমানে প্রকারভেদে প্রতি ৩-৬ টাকা কেজি দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক ভাবে।
চাল কিনতে আসা শহরের মাষ্টারপাড়া মহল্লার বাসিন্দা জাকারিয়া বলেন, সবকিছুর দাম দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। ধানের জেলায় চালের দাম বেড়েছে। এমনভাবে দাম বাড়তে থাকলে আমাদের মত নিন্ম আয়ের মানুষ খাবে কি। দ্রুত বাজার মনিটারিং করে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আনার আহ্বান জানান তিনি। রিক্সা চালক আলমঙ্গীর হোসেন বলেন, চাল কিনতে এসে দেখি সব জাতের চাল দুই থেকে ৩-৬ টাকা বেড়েছে কেজি প্রতি। আমরা কিভাবে চলবো, দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে। এই কান্না কাকে শোনাবো কে শুনবে এভাবে আফসোস করলেন তিনি। রাজিয়া বেগম নামের গৃহিনী বলেন, ভাবছিলাম এক বস্তা (৫০কেজি) চাল কিনবো। কিন্তু বর্তমানে এক বস্তায় ২০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হবে। তাই মাত্র ১০ কেজি স্বর্ণা-৫ জাতের চাল কিনলাম। হুট করে চালের দাম বেড়ে গেছে কোন কারনে বুঝলাম না। সবকিছুর দাম বেড়েছে শুধু বাঁকি ছিল চালের দাম, সেটাও বাড়লো। আমাদের মত মধ্যবিত্তরা কিভাবে খেয়ে পরে জীবন যাপন করবে সেটাই ভাবছি। নওগাঁ পৌর খুচরা চাউল বাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক উত্তম সরকার বলেন, প্রকারভেদে সব চালের (৫০ কেজি) বস্তা প্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা করে বেড়েছে।
নওগাঁ ধান্য-চাউল আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতি’র সভাপতি নিরোদ বরণ সাহা চন্দন বলেন, বাজারে ধানের সরবরাহ কম থাকায় চালের বাজারে প্রভাব পড়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একমত নয় কৃষকরা। তাদের দাবি এই মুহূর্তে ধান নেই কৃষকের ঘরে। চাষিদের মাঠ থেকে ধান তুলে মজুদ করার কোনো সুযোগ থাকে না। কারণ ধান তুলেই বিক্রি করতে হয়, কারণ সেই টাকায় শ্রমিকের মজুরি দিতে হয়, স্যার কীটনাশকের দাম দিতে হয় এছাড়াও সংসার খরচ রয়েছে। ফলে কৃষকরা কোনোদিনই ধান মজুদ করতে পারে না। কিছু ব্যবসায়ী ভরা মৌসুমে চাষিদের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে মজুদ রেখেছিল। সেগুলোই এখন বাজারে বিক্রি করছে বেশি দামে।
নওগাঁ।