ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধিঃ
বিবাহিত, অছাত্র ও হত্যা মামলার আসামিদের নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা ছাত্রলীগের ১৫ সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শোভন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে গত ২৭ এপ্রিল (শনিবার) বিকেলে ওই কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি ঘোষণার আধা ঘণ্টার মধ্যে এক নেতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে নতুন কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন।
পদত্যাগ করা ওই নেতার নাম শেখ এমরানুল ইসলাম। সে নবগঠিত কমিটির সহ-সভাপতি এবং সদ্য বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘চাল ব্যবসায়ীকে সভাপতি, মোবাইল বিক্রেতাকে সাধারণ সম্পাদক, স্ক্যান্ডালার ও বিবাহিত ভাইদের বিজয়নগর উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে আসার জন্য অভিনন্দন! ছাত্রলীগের আদর্শ না রেখে ব্যবসায়ী ও বিবাহিতদের দিয়ে কমিটি দেওয়ার কারণে উপজেলা ছাত্রলীগ থেকে আমি শেখ এমরানুল ইসলাম অব্যাহতি নিলাম!’
এদিকে নতুন কমিটির আরেক সহ সভাপতি ও সদ্য বিলুপ্ত আহবায়ক কমিটির যুগ্ন আহবায়ক সাদ্দাম হোসেন। তিনিও নতুন ঘোষিত কমিটির প্রতি আক্ষেপ নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, "রাজনীতিতে বাটপার ও মীরজাফরদের কদর বেশি। বিবাহিত, ব্যবসায়িক, অছাত্র, *** মিলে বিজয়নগর উপজেলা ছাত্রলীগ।"
সদ্য ঘোষিত কমিটিতে হৃদয় আহমেদকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। এ ছাড়া সহসভাপতি হিসেবে সাদ্দাম হোসেন, শেখ এমরানুল ইসলাম, সোহেল রানা, জাকারিয়া ভূঁইয়া, মো. আবদুল্লাহ ও শিপন ভূঁইয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে হাবিব শাহিন, এইচ এম সুমন, আশরাফ চৌধুরী চাঁদ ও শাখাওয়াত হোসেন হৃদয়, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আসাদ ভূঁইয়া, গোলাম আবু নিশাদ ও মো. সজীব ভূঁইয়া আছেন।
ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী জানান, সদ্য ঘোষিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এইচ এম সুমন বিবাহিত। উপজেলার হরষপুর ইউনিয়নের পাঁচগাঁও গ্রামের আবুল বাশারের মেয়ে নাজমিন সুলতানা ঋতুর সঙ্গে ৮ মাস আগে সুমনের বিয়ে হয়।
নতুন কমিটির সহ-সভাপতি সোহেল রানা উপজেলার আউলিয়া বাজারের ব্যবসায়ী। বর্তমানে অছাত্র। সে ২০১৪ সালের ১৪ জানুয়ারি ১ টাকার জন্য উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের খাটিংগা গ্রামের ব্যবসায়ী বশির মিয়াকে ছুরি দিয়ে আঘাত করলে ঘটনা স্থলেই তার মৃত্যু হয়।
যুগ্ম সম্পাদক হাবিব শাহীনের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ আছে। এ সংক্রান্ত ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। যার জন্য থাকে আহবায়ক কমিটিতে রাখা হয়নি।
মামলার নথিপত্র ঘেঁটে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৩ মে উপজেলার হুমায়ূন কবির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে মাদকবিরোধী সভা হয়। সভায় গ্রামের ওপর দিয়ে মাদক পাচার করতে দেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়। মাদকবিরোধী ওই সভার আয়োজন করেছিলেন আউলিয়া বাজারের ব্যবসায়ী আবু নাছির। পরদিন উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু কাউসার ভূঁইয়া, তাঁর চাচাতো ভাই নতুন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদ ভূঁইয়াসহ ১২ থেকে ১৪ জন আবু নাছিরকে রড ও শাবল দিয়ে পেটান। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবু নাছির মারা গেলে হত্যা মামলা হয়। ওই মামলার ২ নম্বর আসামি আসাদ ভূঁইয়া।
স্থানীয় সূত্র জানায়, জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী সভাপতি গোলাম রাব্বানীর নাম মো. রব্বানী মিয়া। জন্মতারিখ ১৯৯৪ সালের ১৮ মে। সে অনুযায়ী তাঁর বর্তমান বয়স ২৯ বছর ১১ মাস। কিন্তু ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ৫-এর ক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, অনূর্ধ্ব ২৭ বছর বয়সী বাংলাদেশের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা বোর্ড স্বীকৃত যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র বা ছাত্রী বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রাথমিক সদস্য হতে পারবেন। ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলনে বয়সসীমা এক বছর বাড়ান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জানতে চাইলে সদ্য পদত্যাগ করা শেখ এমরানুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘অছাত্র, ব্যবসায়ী, নারী কেলেঙ্কারি, হত্যা মামলার আসামি ও বিবাহিতদের দিয়ে এই কমিটি দিয়েছে। নবগঠিত কমিটির সভাপতি চাল ব্যবসায়ী ও সাধারণ সম্পাদক মোবাইল ব্যবসায়ী। তাই কমিটি থেকে অব্যাহতি নিয়েছি।’
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শেখ এমরান সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক হতে না পেরে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে অব্যাহতি নিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ সম্পূর্ণ সত্য নয়। তাঁরা কারও বিরুদ্ধে ঢালাও অভিযোগ গ্রহণ করেন না। বিয়ের ক্ষেত্রে যদি কেউ কাবিননামা দেন, তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আসাদের বিরুদ্ধে মামলা চলমান। সাজাপ্রাপ্ত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুমন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেছেন।