এম,শাহজাহান, ঝিনাইগাতী (শেরপুর) প্রতিনিধিঃ
জ্যৈষ্ঠের শুরুতে শেরপুরে আগাম জাতের লিচু বাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে। সাধারণত জ্যৈষ্ঠের শুরু থেকে আষাঢ়ের মাঝামাঝি সময়ে শেরপুর জেলার বিভিন্ন এলাকা হয়ে ওঠে লিচুময়। এ সময় জেলাটির ছোট বড় যে রাস্তা দিয়েই যাওয়া যায় দুই পাশে চোখে পড়ে লাল টুকটুকে লিচু বাগান মৌসুমের শুরুতেই রসালো এই ফল কিনতে আগ্রহের কমতি নেই ক্রেতাদের। কিন্তু চলতি মৌসুমে শেরপুরে চিরচেনা সেই রূপটি এখন আর নেই। দামও গতবারের চেয়ে এবার প্রায় দ্বিগুণ। লিচু চাষিরা জানান, প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে লিচুর মুকুল ও গুটি ঝরে যাওয়ায় ফলনে বিপর্যয় ঘটেছে। ফলে এবার তাদের লিচু উৎপাদন প্রায় ৫০শতাংশ কম হবে। আর যে সব গাছে লিচু আছে, তা আকারে ছোট ও ফাঁটা। শেরপুর সদর উপজেলার লসমনপুর, কামারচর, কুসুমহাটিসহ সীমান্তবর্তী শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ীতেও বাণিজ্যিকভাবে ছোট বড় বাগানে লিচু চাষ করা হয়। এই এলাকায় প্রায় শ’খানেক লিচুর বাগান রয়েছে। এসব বাগানে মুজাফরপুরি, বোম্বাই, চায়না থ্রি জাতের লিচু চাষ করা হয়েছে। কিন্তু এবার কোথাও ভালো ফলন হয়নি। বাসাবাড়িতে যারা নিজেদের খাওয়ার জন্য গাছ লাগিয়েছে তাদের অবস্থা আরও খারাপ। কারণ তারা খামারিদের চেয়ে পরিচর্যা পদ্ধতি আরও কম জানেন। সদর উপজেলার লসমনপুরে মানিকগঞ্জ দরবার শরীফের আওতাধীন ৮একর জায়াগায় চায়না থ্রি ও বোম্বে জাতের ৩ শতাধিক লিচু গাছের বাগানে গিয়ে দেখা যায় একই চিত্র। বাগানের দ্বায়িত্বে থাকা মাহবুবুর রহমান বলেন, এবার মুকুল আসার সময় বৃষ্টি এবং পরবর্তীতে তীব্র দাবদাহে লিচুর সব ফুল ঝরে গেছে। গত বছর এই বাগান থেকে প্রায় ৩ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করা হয়েছিলো। এবার ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার বেশি বিক্রি করা যাবে না। যা লিচু ধরেছে তার প্রায় সবই ফাঁটা ও আকারে ছোট। সরেজমিনে ঝিনাইগাতী উপজেলার পাহাড়ি বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাগানগুলোতে চাষিরা লিচু পরিচর্যা করতে ব্যস্ত। কিছু কিছু গাছে অল্প লিচু পাকতে শুরু করেছে। গাছে লিচুর পরিমান কম। কিছু থাকলেও আকারে বেশ ছোট। অনেক গাছে লিচু ফাঁটা অবস্থায় ডালে ঝুলছে। গাছের নিচে পড়ে রয়েছে। প্রচণ্ড গরমে লিচু ডাল থেকে ঝরে যাচ্ছে।
চাষিরা বলছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এবার ফলন কম হওয়ায় বেশিরভাগ চাষিরা লোকসানের মুখে পড়বেন। চলতি মাসেই এই অঞ্চলে লিচু বিক্রি শুরু হয়। লিচু পাকার আগেই পাইকাররা বাগানে এসে লিচু কিনে নেন। এবার লিচুর অবস্থা দেখে কিনতে আসছেন না।
অপরদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে চলমান তাপপ্রবাহ ও অনাবৃষ্টিতে এবার লিচুর ফলন কম হওয়ার বড় প্রভাব পড়েছে লিচুর বাজারে। মাত্র এক সপ্তাহ আগে মৌসুমী লিচু শেরপুরের বাজারে আসতে শুরু করেছে। যশোর, রাজশাহী ও দিনাজপুরের লিচু এখনও বাজারে আসেনি। এই জেলাগুলোর পরিপক্ক ও রসালো লিচুর জন্য ক্রেতাদের আরও দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। গত বছর এই সময়ে প্রতি ১০০টি লিচু ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বিক্রি হয়েছে এবং সেই লিচু কিনতে হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকায়। শহরের খোয়ারপার ও নয়ানী বাজারের ফুটপাতের লিচু বিক্রেতারা বলেন, এবার দাম বেড়েছে লিচুর। পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায় খুচরা বাজারে দাম বেড়েছে। তবে ছোট আকারে লিচু ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় যেগুলো বিক্রি হচ্ছে সেটা খাওয়ার একেবারেই অনুপযোগী।
এব্যাপারে ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার বলেন, গরম মৌসুমে লিচুতে কিছুটা প্রভাব পড়ে। তবে এবার তাপমাত্রা একটু বেশি। তাই লিচু গাছে ফলন বিপর্যয়। তবে নিজস্ব তত্ত্বাবধানে পানি সরবরাহ ও সঠিক পরিচর্যা করলে ক্ষতির পরিমাণ কমানো সম্ভব।