মোঃ আজগার আলী, জেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরা:
সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার চিনেরডাঙা গ্রামের সিরাজুল সরদারকে ২০১৪ সালের ২৮ এপ্রিল বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন ও গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাবেক পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর, দেবহাটা থানার সাবেক ওসি কাজী জালাল আহম্মেদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমানসহ ৪৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ২৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের বোন আনজুয়ারা খাতুন বাদি হয়ে মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সাতক্ষীরা দায়রা জজ আদালতে এ মামলা দায়ের করেন।
বিচারক চাঁদ মোঃ আব্দুল আলীম আল রাজী নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩ এর ৫(৫) ধারা অনুযায়ী ডিআইজি খুলনাকে একই আইনের ২(৩), ২(৪),২(৫), ২(৭), ৭(১), ৮(১), ১৩(১), ১৩(২) ও ১৪(১) ধারাসহ উল্লেখিত আইনে বর্ণিত ধারার আলোকে তিনি নিজে অথবা অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের পদমর্যাদার নীচে না এমন কোন পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে অভিযোগের তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার অন্যান্য প্রধান আসামীরা হলেন, দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাঝ পারুলিয়া গ্রামের মোঃ মনিরুজ্জামান মনি, উপজেলা ছাত্রলীগের তৎকালিন সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান ওরফে সবুজ, সখীপুর ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন রতন, ভোমরার ব্যবসায়ি চিনেরডাঙা গ্রামের সাইফুল ইসলাম ও কুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান অ’লীগ নেতা মোঃ আসাদুল হক।
মামলার বিবরণে জানা যায়, দেবহাটা উপজেলার চিনেরডাঙা গ্রামের বাবর আলীর ছেলে জামায়াত কর্মী সিরাজুল সরদার সবজির ব্যবসা করতো। ২০১৪ সালের ২৮ এপ্রিল বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে আসামী চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর ও দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী জালাল আহম্মেদ এর নির্দেশে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা তাদের বাড়িতে আসে। আসামী শরিফুল ইসলাম ও একরামুল কবীর ঘরে ঢুকে সিরাজুল সরদারকে জোরপূর্বক বাইরে এনে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পুলিশ সিরাজুলকে তাদের পিকআপে তুলে নিয়ে যায়।
একপর্যায়ে ২৯ এপ্রিল ভোর রাত সাড়ে তিনটার দিকে ভিকটিমের স্বজনরা সখীপুর ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের কেওড়াতলা নামক স্থানে কালভার্টের দিকে গুলির শব্দ শুনতে পায়। পুলিশ রক্তাক্ত সিরাজুলকে পিকআপে করে সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সিরাজুলকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ২৯ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে ময়না তদন্ত শেষে সিরাজুলের লাশ তার স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বিকালে সিরাজুলের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে পুলিশ নিহত সিরাজুল সরদারসহ অজ্ঞাতনামা ১৫ জনকে আসামী শ্রেণীভুক্ত করে ২৯ এপ্রিল রাতেই দেবহাটা থানায় ১৯৭৮ সালের অস্ত্র আইন ও ১৯০৮ সালের বিষ্ফোরক দ্রব্য আইন তৎসহ ফৌজদারি দ-বিধির ৩০২/৩৪ ধারাসহ কয়েকটি ধারায় মামলা(জিআর- ৫১/১৪, দেবঃ) দায়ের করেন।
বাদি পক্ষের আইনজীবী সাতক্ষীরা জজ কোর্টের অ্যাড. হাফিজুর রহমান মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনার সময় পরিস্থিতি অনুকুলে না থাকায় বর্তমানে পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় মামলা দায়ের করা হলো।